পণ্য পরীক্ষার বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় পাকিস্তান থেকে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত বাংলাদেশে আসছে। আগে পাকিস্তানের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু বিগত ২০২৪ সালে আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক প্রজ্ঞাপনে ওই বাধা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উঠিয়ে নিয়েছে। ফলে ওই বছরের নভেম্বর থেকে পাকিস্তান থেকে সরাসরি পণ্য নিয়ে কনটেইনার জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে আসছে। বিগত ২০২৪ সালে পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসা কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা ছিল দুটি আর চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৪টি জাহাজ এসেছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে জড়িত এবং চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য আরো বাড়াতে গঠন করা হচ্ছে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি)। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চট্টগ্রাম সফরে বলেছেস দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখতে হলে আরো বাড়াতে হবে বাণিজ্য। সেজন্য ২৪টি ওয়ার্কিং গ্রুপও গঠন করা হবে। বিগত সরকারের সময় ২০২৩ সালে স্থায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে কম ট্যারিফে ভারতকে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দরসহ ৮টি রুটে ট্রানজিট পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যদিও বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভারত ২০২০ সাল থেকেই পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পণ্য আনা-নেয়া করতে থাকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য বেড়েছে ২০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে পাকিস্তান ৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সাত কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে। যা আগের অর্থবছরে ছিল পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ট্রানিজট পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো জাহাজ আসছে না। ভারত থেকে এমনকি গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তির কোনো চালও আসেনি। বিপরীতে এক বছরে সমুদ্রপথে পাকিস্তানের জাহাজ আসায় নতুন গতি এসেছে। জিটুজি চুক্তির ভিত্তিতে আগে ভারত থেকে সরকারি চাল আসতো। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জিটুজি চুক্তির ৫০ হাজার টন চাল পাকিস্তান থেকে এসেছে। তবে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা কিছু চাল সাপ্লাইয়ার ভারত থেকে আমদানি করে সরবরাহ করেছে। তবে জিটুজি চুক্তির চাল ভারত থেকে আসেনি।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন। তার মধ্যে কনটেইনারে আনা পণ্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ টনেরও কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরাসরি জাহাজে প্রথমবারের মতো ২০ ফুট দীর্ঘ ৪২৮৪টি কনটেইনার এসেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি জাহাজসেবা চালুর কারণে এখন ব্যবসায়ীরা ১০ দিনে পণ্য হাতে পাচ্ছেন। তাতে করে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সময়ও সাশ্রয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সরাসরি পাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বরে আসা জাহাজটিতে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য ছিলো। ওসব পণ্যের ওজন ছিলো ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তান থেকে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সরাসরি চালান আসে। সেবার জাহাজটিতে চিনি, আখের গুড়, ডলোমাইট, সোডা অ্যাশ, থ্রি-পিস, খেজুর ইত্যাদি ছিলো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

পাকিস্তান থেকে নিয়মিত আসছে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ
- আপলোড সময় : ২৯-০৯-২০২৫ ০৬:৩২:৩৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০৯-২০২৫ ০৬:৩২:৩৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ